December 22, 2024, 3:10 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেক/
আজ ১১ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার মুক্তি সেনারা সংগ্রাম করে পাকবাহিনীর হাত থেকে কুষ্টিয়াকে মুক্ত করেছিলেন।
সেদিন অত্যাধুনিক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হানাদার পাকসেনার বিরুদ্ধে সাহসী বাঙালী তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা অমিত তেজে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে ছোট-বড় ২২টি যুদ্ধ করে কুষ্টিয়ার পবিত্র মাটি পাক হানাদার পাকিস্তানী সেনাদের হটিয়ে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষের গগণবিদারী ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে সেদিন কুষ্টিয়ার আকাশ-বাতাস মুখোরিত হয়ে উঠেছিল। পথে প্রান্তরে গড়ে তোলা হয়েছিল বেরিকেড। লাঠি-সড়কি, ঢাল- তলোয়ার নিয়ে বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ ছুটে এসেছিল কুষ্টিয়া শহরে।
মুক্ত দিবস উপলক্ষে করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুক্রবার কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডো ইউনিট, জেলা আ’লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ যুদ্ধ পরিকল্পনা হিসেবে পাক সেনাবাহিনীর ২৭ বেলুচ রেজিমেন্টের এক কোম্পানী সৈন্য ২৫ মার্চ রাতে যশোর সেনানিবাস থেকে কুষ্টিয়া এসে অবস্থান গ্রহণ করে।
মেজর আবু ওসমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কুষ্টিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দের সঙ্গে আলাপ করে ক্যাপ. আযম চৌধুরীকে যশোরে ঝিকর গাছায় প্রেরণ করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য। স্বাধীনতাপ্রিয় কুষ্টিয়ার মানুষ পাক বাহিনীর এ জাতীয় কার্যক্রম সেদিন মেনে নিতে পারেনি। সান্ধ্য আইন ভেঙ্গে তারা বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। যুদ্ধকালীন সময়ে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা ৮নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মেজর আবু ওসমান চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ৩০ মার্চ ভোর ৪টায় তিনদিক থেকে অতর্কিতভাবে কুষ্টিয়ায় আক্রমণ শুরু হয়। স্থানীয় হাজার হাজার জনগণের গগণবিদারী ‘জয় বাংলা’ জয়ধ্বনিতে শত্রু পক্ষের মনোবল মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। মাত্র এক ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর দখলে থাকা কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন দখল করে নেয়।
৩১ মার্চ তুমুল যুদ্ধ চলে। পাকবাহিনী ২টি জিপ ও ১টি ডজ গাড়ি নিয়ে কুষ্টিয়া থেকে পালানোর সময় গাড়াগঞ্জের ব্রিজের গর্তে গাড়ি দুটো পড়ে গিয়ে মেজর শোয়েবসহ শত্রু সেনারা মারা যায়। ১ এপ্রিল কুষ্টিয়া সম্পূর্ণ রূপে শত্রুমুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে চলে যায়।
এই যুদ্ধে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং অনেকে আহত হন। দীর্ঘ ১৭ দিন মুক্ত থাকার পর কুষ্টিয়া পুনরায় পাকবাহিনীর দখলে চলে যায়। এরপর পাকসেনারা শহরে প্রবেশ করেই অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা এবং ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে যায়। ১০ ডিসেম্বর সকালে কুষ্টিয়া শহরের দক্ষিণে চৌড়হাস জিকে ক্যানেলের ব্রিজের উত্তর পাশে মেইন রাস্তায় মুক্তিবাহিনী-মিত্র বাহিনী যৌথভাবে পাকিস্তানবাহিনীর সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এখানেও মিত্র বাহিনীর ৭০ জন শহীদ হন। ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলার সমস্ত এলাকা স্বাধীন ও শক্র মুক্ত হয়। ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহর, পোড়াদহ, মিরপুর, ভেড়ামারা এলাকা শত্রু মুক্ত হয়।
এই দিনে কুষ্টিয়াবাসীর একমাত্র প্রত্যাশা একটি সুখী সমৃদ্ধ কুষ্টিয়া। সবার প্রত্যাশা কুষ্টিয়া এগিয়ে যাবে।
Leave a Reply